নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া :: চকরিয়ার ডুলাহাজারাস্থ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের জীববৈচিত্র্য জোন এলাকায় ঢুকে পড়েছে বন্যহাতির একটি পাল। সেই পালে কয়েকটি শাবকসহ রয়েছে ১৭ থেকে ১৮টি বন্যহাতি। তারা গত তিনদিন ধরে পার্কের বন্যপ্রাণী আবাসস্থল উন্নয়ন এবং চারণভূমি সৃজনের তিনটি প্রকল্পের দুইশ হেক্টর এলাকায় সৃজিত ফলদ ও বনজ বাগানে ব্যাপক তাণ্ডব চালাচ্ছে। সেখানে খাবারের নিরাপদ আবাস খুঁজে পাওয়ায় কোনভাবেই বন্যহাতিগুলোকে সরানো যাচ্ছে না। এ অবস্থায় পার্কের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জীববৈচিত্র্য জোন এলাকায় কড়া পাহারা বসিয়েছে। যাতে হাতিগুলো পার্কের বিভিন্ন বন্যপ্রাণী বেস্টনী তথা পর্যটক-দর্শনার্থীদের ঘুরে-বেড়ানোর জায়গায় আসতে না পারে।
বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের সীমানার কাছের পূর্ব মাইজপাড়ার বাসিন্দা গুরা মিয়ার ছেলে আবদু রহিম ও লাঠের ঘাট এলাকার আবু ছৈয়দের ছেলে আমিনুল ইসলাম আজ বুধবার দুপুরে চকরিয়া নিউজকে বলেন, তিনদিন আগে গহীন জঙ্গল থেকে ১৭ থেকে ১৮টি বন্যহাতির একটি পাল পার্কের বন্যপ্রাণী আবাসস্থলের সৃজিত বাগানে ঢুকে পড়ে। যেদিন হাতিগুলো এখানে ঢুকে পড়ে সেদিন থেকে আশপাশের চার-পাঁচটি পাড়ার মানুষ নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে। এসব পাড়ার লোকজন আগুনের মশালসহ বিভিন্ন কায়দায় হাতি তাড়ানোর কৌশল নিয়ে রাত জেগে পাহারা বসিয়েছে। তাদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে, কখন লোকালয়ে হানা দেয় এসব বন্যহাতি।
পার্কের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জানান, সাফারি পার্কের বগাচতর মৌজা, পাগলির বিল মৌজায় সৃজিত বন্যপ্রাণী আবাসস্থল উন্নয়ন ও চারণভূমি সৃজন প্রকল্পের জীববৈচিত্র্য জোন এলাকায় বর্তমানেও হাতিগুলো অবস্থান করছে।
পার্ক কর্তৃপক্ষ জানায়, ২০১৯-২০ ও ২০২০-২১ অর্থবছরে উক্ত দুই মৌজার ৫০ হেক্টর করে ১০০ হেক্টর বনভূমিতে বন্যপ্রাণী আবাসস্থল উন্নয়ন এবং বগাচতর মৌজার ১০০ হেক্টরজুড়ে সৃজন করা হয় চারণভূমির বনায়ন। যেখানে রোপন করা হয় উড়ি আম, বৈল আম, আমলকী, হরিতকি, বহেরা, চালতা, নলি, পুঁতি ও কলা প্রজাতির জাম, ঢাকী জাম, চাপালিশ, বর্তাসহ হরেক প্রজাতির ফলজ ও বনজ বৃক্ষ। কিন্তু গত তিনদিন ধরে বন্যহাতির পাল এখানে হানা দেয়ায় ব্যাপক ক্ষতি হয় এই বাগানের। এতে প্রায় ৭০ হেক্টর বাগান একেবারে নষ্ট করে ফেলে হাতিগুলো।
সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক মো. মাজহারুল ইসলাম চৌধুরী চকরিয়া নিউজকে বলেন, ‘ মাসখানেক আগে চকরিয়ার মানিকপুরে যে হাতির পালটি হানা দিয়েছিল, একই পাল গত তিনদিন ধরে অবস্থান করছে সাফারি পার্কের জীববৈচিত্র্য জোন এলাকায়। গত তিনদিনে হাতির পালটি একেবারে লণ্ডভণ্ড করে দিয়েছে তিনটি বনায়ন প্রকল্পের ৭০ হেক্টরে সৃজিত ফলজ ও বনজ বাগান।’
তিনি আরো বলেন,‘পার্কের ভেতরে বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল ও চারণভূমিতে হাতিগুলো যেভাবে খাবারের নিরাপদ আবাস খুঁজে পেয়েছে, এতে ধারণা করছি, আগামী একমাসেও তারা এখান থেকে যাবে না। তাই আগত পর্যটক-দর্শনার্থীদের ভ্রমণের স্থান তথা পার্কের বন্যপ্রাণীর বেস্টনী এলাকায় যাতে হাতিগুলো চলে আসতে না পারে সেজন্য কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে।’
বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের প্রকল্প পরিচালক, চট্টগ্রাম বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিভাগীয় বনকর্মকর্তা (ডিএফও) মো. রফিকুল ইসলাম চকরিয়া নিউজকে বলেন, ‘খাবারের সন্ধানে চকরিয়া-লামার পাহাড়ে গত একমাস ধরে ছুঁটে চলা বন্যহাতির পালটি পার্কের জীববৈচিত্র্য জোন এলাকায় নিরাপদ খাদ্যভাণ্ডার হিসেবে খুঁজে পেয়েছে। তাই হাতিগুলোকে তাড়ানো যাচ্ছে না। এ অবস্থায় পার্কের পর্যটক-দর্শনার্থীদের নিরাপত্তায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।’
পাঠকের মতামত: